প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে মানুষে মোবাইল ,কম্পিউটার সহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার।ইন্টারনেট সেবাতো এখন অনেক সহজলভ্য । সেই সাথে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সোশিয়াল মিডিয়া সহ অনন্য সাইট সমূহ। বুড়ো,তরুণ থেকে শুরু করেবাচ্চাদের হাতে হাতে চলে গিয়েছে প্রযুক্তির এই জাদুর কাঠিগুলো।পড়ালেখা, গবেষণা, যোগাযোগ, মতামত আদান প্রদান সহ মানুষএখন প্রযুক্তির উপর প্রচুর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম সমূহ।
সাইবার অপরাধ বা Cybercrime বলতে কি বোঝায়?
সাধারণত কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয় তাকেই বলা হয় সাইবার অপরাধ বা Cyber Crime।
সাইবার অপরাধ গুলোর মধ্যে রয়েছে –
১। হ্যাক করা,
২। স্পাম বা ভাইরাস ছড়ান,
৩। কাওকে উত্যক্ত বা মানহানী করা।
৪। রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করা।
৫। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অনলাইন গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করা বা শেয়ার করা,
৬। কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হুমকি দেওয়া,
৭। অশালীন কোন কিছু পাঠানো,
৮। কারো নামে ভুয়া একাউন্ট খোলা,ইত্যাদি।
বাংলাদেশের আইনে সাইবার অপরাধের সাজা সমূহ:
বাংলাদেশের আইনে বর্তমানে সাইবার অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত২০১৩)-এ রয়েছে এই অপরাধের বিচারের বিধান। এ আইনের ৫৪ থেকে ৬৭ নম্বর ধারায় অপরাধের দণ্ড সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখকরা হয়েছে।
এগুলো সম্পর্কে প্রতিটা নাগরিকের জানা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। সঠিক জ্ঞান না থাকলে অসাবধানে বড় মাশুল দিতে হতে পারে ।এছাড়া নিজের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হতে পারবেন ।
আসুন তাহলে জেনে নেই কোন অপরাধের কেমন সাজা?
১। কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি করলে, ভাইরাস পাঠালে সর্বোচ্চ ১৪ বছর - ৭ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা -
কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতি করলে , অনিষ্ট সাধন যেমন ই-মেইল পাঠানো, ভাইরাস ছড়ানো, সিস্টেমেঅনধিকার প্রবেশ বা সিস্টেমের ক্ষতি করা ইত্যাদি অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আইনের এই বিধান অনুযায়ী উভয় (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) প্রদানের বিধানও রয়েছে।
২। কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন করলে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড -
আইনের ৫৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধের কথা। এখানে বলা হয়েছে, কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধ করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
৩। হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর - ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা-
৫৬ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ক্ষতি করার উদ্দেশে এমন কোন কাজ করেন, যার ফলে কোন কম্পিউটার রিসোর্সের কোন তথ্যবিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা এর উপযোগিতা হ্রাস পায় অথবা কোন কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্ক বা কোনইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন, তবে এটি হবে হ্যাকিং অপরাধ, যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন৭ বছর কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
৪। কাওকে মানহানি করে কোন কিছু পোস্ট করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর - ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা-
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোন মিথ্যা বা অশ্লীলকিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে এগুলো হবে অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্তজরিমানা। উভয় (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) দণ্ড দেওয়ার বিধানও এই আইনে রয়েছে। উল্লেখ্য, তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের পর এইধারাটি আইনে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। তবে একই ধরনের একটি ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে নতুন একটিআইনে সংযুক্তির চেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
৫।ভুয়া ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর বা সার্টিফিকেট করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড -
আইনের ৬৩ ধারায় গোপনীয়তা প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডপ্রদানের কথা বলা হয়েছে। ৬৪ ধারায় সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড প্রদানের কথা বলাহয়েছে ভুয়া ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধে। ৬৫ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতারণার উদ্দেশে ইলেকট্রনিকস্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড প্রদানের কথাবলা হয়েছে।
৬।কম্পিউটারের মালিক অপরাধীর সমান সাজা পাবে-
আইনের ৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কারও কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হলে, অপরাধকারী যে দণ্ডে দণ্ডিতহবেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে অপরাধে সহায়তার জন্য কম্পিউটারের মালিকও সমান সাজা পাবেন। ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনকোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীনে থাকা কোন অপরাধ সংঘটিত হলে ওই অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কোম্পানিরএমন প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী উক্ত অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে গণ্য হবে।তবে ওই অপরাধ কোন ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হয়েছে প্রমাণ হলে অথবা ওই ব্যক্তি অপরাধ রোধ করতে যথাসাধ্য চেষ্টাকরেছেন প্রমাণ হলে তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন।’
এ আইন সম্পর্কে সচেতন হওয়া কেন প্রয়োজন:
প্রতিটা নাগরিকের এই আইন সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এই আইনের মাধ্যমে যেমন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যাবে। ঠিকতেমনি আইন সঠিক ভাবে না জানার ফলে যে কোন ব্যক্তি বিপদে পড়তে পারে।
এই আইনের অপব্যবহার করে যে কোন ব্যক্তিকে বিপদেও ফেলা যেতে পারে । এজন্য আইন সম্পর্কে জানুন এবং সতর্কতার সাথেপ্রযুক্তির ব্যবহার করুন।
- রাজনৈতিক বা কাওকে আক্রমণ করে পোস্ট দিবেন না, এসব পোস্ট শেয়ার বা লাইক ও দিবেন না,
- ইনবক্সেও কাওকে অশালীন মেসেজ পাঠাবেন না। ইনবক্সের স্ক্রীন শট প্রকাশ পেয়ে এখন অনেকেই কিন্তু বিপদে পড়েছে।
- নিজের পাসওয়ার্ড সাবধানে রাখুন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আন্তীয়, ভাই, বোন কাওকে দিবেন না,
-কম্পিউটার , মোবাইলে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন,
- ব্যক্তিগত জীবনে সৎ থাকুন।
কিছু টিপস
- নিজের কম্পিউটার কাওকে ব্যবহার করতে দেবার ক্ষেত্রে সতর্ক হওন,- রাজনৈতিক বা কাওকে আক্রমণ করে পোস্ট দিবেন না, এসব পোস্ট শেয়ার বা লাইক ও দিবেন না,
- ইনবক্সেও কাওকে অশালীন মেসেজ পাঠাবেন না। ইনবক্সের স্ক্রীন শট প্রকাশ পেয়ে এখন অনেকেই কিন্তু বিপদে পড়েছে।
- নিজের পাসওয়ার্ড সাবধানে রাখুন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আন্তীয়, ভাই, বোন কাওকে দিবেন না,
-কম্পিউটার , মোবাইলে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন,
- ব্যক্তিগত জীবনে সৎ থাকুন।
জানুন, ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন!
No comments:
Post a Comment